এই ভিডিওটি ডাউনলোড করুন
আপু আমি আপনার লেখা অনেক পড়েছি, আপু আপনার কথায় ঠিক জীবনের বাক সত্যিই বিচিত্র। মানুষের জীবনে কখন কি হয় সেটা কেও বলতে পারে না, তেমনি আমিও জানি না আমার এই জীবনে কি ঘটতে চলেছে। আমি হয়তো শেষ হয়ে যাবার পথে, আমি আর পারছি না, আমার কথা শুনলে আপনি নিজেই অবাক হবেন। দিনের পর দিন আমি যে কত কস্ট করে চলেছি সেটা আমার পরিবার আর আল্লাহ জানেন।
তাহলে শুনুন আমার কথা, আমি যখন ক্লাস থ্রিতে পড়ি তখন আমার বাবা দুবাই থেকে দেশে আসে। আমরা জয়েন্ট ফ্যামিলিতে থাকতাম, বাবা সব টাকা বড় চাচার কাছে পাঠাতো। বাবা বাড়িতে আসার কিছুদিন পরে সবাই আলাদা হয়ে যায়। আমার বাবা অনেক টাকা পাঠিয়েছিলেন বিদেশ থেকে কিন্তু আলাদা হয়ে যাবার পরে তেমন কিছুই পায়নি। এভাবে খুব কস্টে চলছিল আমাদের সংসার। আমি যখন ক্লাস সেভেনে পড়ি তখন থেকে নিচের ক্লাসের ছেলেমেয়েদের প্রাইভেট পড়ানো শুরু করি। সেই থেকে আমার জীবন সংগ্রাম আজও চলছে, এভাবে খুব কস্টে এস.এস.সি এবং ইন্টার পাস করলাম। প্রথম বছরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞানে ভর্তি হই, কিন্তু নতুন পরিবেশ টিউশনির সুযোগ খুব কম এক বছর লস দিয়ে এক বন্ধুর সহোযোগীতায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই। আমার আম্মুর একটা গরু ছিলো সেটা বিক্রি করেই আমাকে টাকা দেই, ঢাকায় আসার পরপরই দুইটা টিউশনি শুরু করি।
নিজের খরচ নিজেই চালাতে পারছিলাম, এভাবে বেশ ভালোই চলছিল কিন্তু নিয়তি খুব নিষ্ঠুর। আমার বাবা হঠাৎ একদিন স্টোক করে মারা যায়, আমি খুবই ভেংগে পড়ি, সংসারে আমার আম্মা সহ আরো দুই ছোট ভাই এক বোন আছেন। এখন আমি এই সামান্য টিউশনির টাকা দিয়ে নিজে চলবো কিভাবে আর বাড়িতে দিবো কি? চাকরি খুজতে থাকি, একটা প্রত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেখলাম ট্রাভেল এজেন্সিতে নিয়োগ হবে, ঢাকার পল্টনে। আমি যথাসময়ে উপস্থিত হয়, চাকরি টাও হয়ে যায়, একটু হাফ ছেড়ে বাচি। সপ্তাহে আমার ক্লাস ছিলো চারদিন, চাকরি করার কারণে সবসময় ক্লাস করতে পারতাম না। আমার বিষয়টি প্রায় সকল স্যার জানতেন, এইজন্য আমি বিভাগ থেকে সুবিধা পেতাম। তাছাড়া আমার এস,এস,সি এবং ইন্টারে A+ থাকার কারণে আমার উপর সব শিক্ষকের নজর ছিলো।
অফিসে আমি সহ মোট এগারো জন কর্মচারী ছিলাম, আমাদের বস বয়সে খুব বেশী সিনিয়র না। কিছুদিন না যেতেই আমি অফিসে সবার প্রিয় পাত্র হয়ে উঠলাম। সবাই আমাকে নিয়ে মাঝে মাঝে মসকরা করতো, আমি নাকি খুব সুন্দরী আমাকে যে বিয়ে করবে সে খুব ভাগ্যবান হবে। আমার গুরুত্বপূর্ণ কোন ক্লাস কিংবা পরীক্ষা থাকলে বস আমাকে নিজেই অফিসে আসতে নিষেধ করতো, তাছাড়া বস বিভিন্ন অজুহাতে আমাকে মাঝে মাঝে ফোন করতেন। আকারে ইঙ্গিতে উনি আমাকে অনেক কিছুই বোঝাতে চাইতেন কিন্তু আমি এড়িয়ে চলতাম। উনার জন্মদিনে আমরা অফিসের সবাই একে একে উনার রুমে যেয়ে শুভেচ্ছা জানালাম, সবাই চলে গেলে উনি আমাকে বসতে বললেন। আমাকে প্রপোজ করলেন, আমি কিছুই না বলে চলে এলাম। দুই দিন অফিসে যায়নি, এই দুইদিনে আমাকে অগণিত ফোন করেছে কিন্তু আমি রিসিভ করিনি। পরে অফিস থেকে আমাকে একজন ফোন করে বললো আমি নাকি চাকরি করতে ইচ্ছুক না।
কিন্তু না করে উপায় নেই, সংসারের খরচ আমার খরচ আমি কিভাবে চালাবো। সে ভাবনা থেকে আমি আবারো অফিসে গেলাম, অফিসের কাওকেই আমি এগুলো বুজতে দেইনি। আমি অফিসে গেলেও উনার সাথে তেমন কথা বলিনি। কিছুদিন পরে উনি আমার পায়ে পড়লেন একপ্রকার, আমাকে ছাড়া নাকি স্যার বাঁচবেন না। আমাকে উনি বিয়ে করতে চান, আমি সময় নিলাম ভেবে দেখবো বলে। একদিন অফিস অফ ছিলো জরুরী কাজ আছে বলে স্যার আমাকে অফিসে ডাকলেন। শুরুতেই আমার যেন কেমন কেমন লাগছিলো, আমি অফিসে গেলাম। ওইদিন আরো তিনজন এসেছিলো অফিসে, স্যার আমাকে বেশ কিছু কাজ দিলেন। সবাই কাজ শেষ করে চলে গেলেন, শুধু রইলাম আমি আর স্যার। আমি একমনে কাজ করেই চলেছি, স্যার আমাকে ডাকলেন।
আমি রুমে ডুকতেই স্যার আমাকে জাপটে ধরলেন যেটার জন্য আমি মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না। আপু আমি অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু নিজেকে সেভ করতে পারেনি। উনার যা যা করার ছিলো সবই করছে, তারপর আমি উনার গালে দুইটা থাপ্পড় মারলাম। উনি আমার পায়ে ধরলেন বললেন আমাকে ছাড়া নাকি উনার চলবে না, আমাকে বিয়ে করতে না পারলে আত্বহত্যা করবেন। আমাকে উনি বাসায় পোঁছে দিলেন, রাতে আবারো ফোন দিলেন, আমি রাতের ভিতরে কিছু না জানালে উনি আত্বহত্যা করবেন। আমি অনেক ভেবে রাজি হলাম, তারপর থেকেই আমাদের ভিতরে সবকিছুই হতো। আমি ইদানিং বার বার বিয়ের কথা বলতাম কিন্তু নাইম এড়িয়ে যাচ্ছে, আমাকে নিয়ে টালবাহানা করছে, কয়েকদিন আগে জানতে পারলাম নাইম আমেরিকায় চলে গেছে। অফিসে এখন থেকে নাইমের ভাই দেখাশুনা করবে। আমি ভাইবারে নাইমকে কল করলাম, আমাকে যেটা বললো সেটা শুনে আমার আর বাচার ইচ্ছে নাই। ও নাকি আমার সাথে মজা করেছে আমাকে বিয়ে করবে না। আপু আমি এখন কি করবো, আমার কি হবে, আমার জীবন টা এমন হলো কেন? আমি আর বাচতে চাই না, আমার জীবনটা এভাবে নস্ট হলো কেন?
এই ভিডিওটি ডাউনলোড করুন
Social Plugin