বিয়ে যেন নেশায় পরিণত হয়েছে ওস্তাদ কাশেমের। ২২ বছরের এই যুবক ইতোমধ্যে বিয়ে করেছেন ৮টি। কেন তার এই বিয়ের নেশা শুনলে যে কেউ অবাক হবেন। গ্রাম থেকে অল্প বয়সী তরুণীদের চাকরি সহ বিভিন্ন ধরনের প্রলোভন দেখিয়ে নিয়ে আসতেন শহরে। সেই তরুণীদের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলতেন তিনি।
সংসার কিংবা বংশরক্ষার জন্য বিয়ে করতেন না কাশেম। নারী ব্যবসার তাগিদেই একের পর এক বিয়ে। বিয়েকে ফাঁদ হিসেবে ব্যবহার করতেন তিনি। সুখী জীবনের স্বপ্ন দেখিয়ে দরিদ্র মেয়েদের ধরার ফাঁদ পাতেন কাশেম। এরপরে সেই মেয়েদের ভারতের রাজধানী নয়া দিল্লিসহ বিভিন্ন দেশে দালালদের কাছে বিক্রি করে দিতেন।
এ কাজে শুধু কাশেম নয় তার সঙ্গে আছে আরো এক চক্র। গুজরাটের ওই তরুণকে রোববার আটক করেছে দেশটির পুলিশ।
কলকাতার বাংলা দৈনিক আনন্দ বাজারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোববার রাতে ছিল ঘুটঘুটে অন্ধকার। হেঁটে একটি একতলা বাড়ির সামনে পৌঁছালেন ২০ যুবক। সঙ্গে দুজন নারীও ছিলেন। ওরা ঘিরে ফেললেন বাড়িটি। দরজায় ধাক্কা মারলেন তিন যুবক। দরজা খুলতেই আগন্তুকদের ওপর তিন জন চ়ড়াও হয়। খাটে শুয়ে থাকা এক ব্যক্তিকে তুলে নিয়ে তারা রওনা হলেন থানার দিকে।
ওই ২০ যুবক ছিলেন গোয়েন্দা পুলিশের সদস্য। সিআইডির দাবি, সেদিন রাতে এভাবেই জয়নগরের মনিরতট গ্রামের একটি বাড়ি থেকে গোয়েন্দারা গ্রেফতার করেছেন নারী পাচার চক্রের অন্যতম হোতা কাশেমকে। তার বিরুদ্ধে দিল্লি, গুজরাট, উত্তরপ্রদেশসহ বিভিন্ন রাজ্যে নারী পাচারের মামলা রয়েছে।
কীভাবে মেয়ে পাচারের কারবার চালাচ্ছিল কাশেম? সিআইডি বলছে, দুই ধরনের মোক্ষম টোপ বেছে নিয়েছিল কাশেম। প্রেম-প্রেম খেলা আর বিয়ে। এবং ভাল চাকরি। বিভিন্ন রাজ্যে এজেন্ট ছড়িয়ে দিয়ে তাদেরও মূলত ওই দু’টি টোপ ব্যবহারেরই প্রশিক্ষণ দিতো কাশেম। সেই এজেন্টরা টোপ ফেলে দরিদ্র মেয়েদের বিয়ে করতো। তার পরে চাকরি দেওয়ার নামে তাদের পাচার করে দিত কাশেমের কাছে।
কাশেম সেই মেয়েদের বিক্রি করে দিত অন্য রাজ্যে। নিজেকে বাঁচানোর জন্য বিশেষ একটি কৌশল অবলম্বন করতো কাশেম। মোবাইল ফোনে কখনো কোনো কথা বলত না। ফলে তার খোঁজ পেতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছিল সিআইডিকে। স্থানীয় পুলিশের সাহায্য নিয়ে সিআইডির একটি দল রোববার সন্ধ্যায় হানা দেয় ওই বাড়িতে।
সিআইডি জানিয়েছে, জুলাইয়ে জয়নগর থেকে ১৪ বছরের এক কিশোরী নিখোঁজ হয়। বিভিন্ন সূত্রে গোয়েন্দারা জানতে পারেন, ওই কিশোরীকে দিল্লিতে পাচার করা হচ্ছে। তখন থেকেই সতর্ক ছিলেন গোয়েন্দারা। অক্টোবরে দিল্লিগামী কালকা ট্রেন থেকে উদ্ধার করা হয় ওই কিশোরীকে।
মেয়েটি জানায়, খইরুল ওরফে মুন্না নামে এক যুবকের সঙ্গে তার সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। তাকে বিয়েও করে সেই যুবক। পরে ভাল চাকরির টোপ গিলিয়ে মেয়েটিকে উত্তরপ্রদেশ নিয়ে যাচ্ছিল সে। সিআইডি পুলিশ তাকে গেফতার করে। মুন্না জানায়, মেয়েটিকে কাশেমের কাছে বিক্রি করে দেয়ার পরিকল্পনা করেছিল। এর আগেও বিয়ের টোপ দিয়ে অন্তত আটটি কিশোরীকে দিল্লিতে নিয়ে গিয়ে কাশেমের কাছে বিক্রি করেছে।
গ্রেফতারের পর কাশেম জানায়, ব্যবসার খাতিরে তার নিজের বিয়ের সংখ্যাটাও অন্তত আট। এর বাইরে আছে তার অন্যান্য এজেন্টের বিয়ে ও মেয়ে পাচার। সংখ্যাটা মোট কত, ভেবে কূল পাচ্ছেন না গোয়েন্দারা। তদন্তকারী কর্মকর্তাদের ধারণা শুধু জয়নগর, ক্যানিং, ডায়মন্ড হারবার এলাকা থেকে ১৫ জনেরও বেশি কিশোরীকে বিয়ে করে বাইরে পাচার করে দিয়েছে কাশেমের চক্র। সেই কিশোরীদের অনেকেই এখন দেশের বিভিন্ন যৌনপল্লিতে আছে।
এক তদন্তকারী কর্মকর্তা বলেন, কাশেম ওই চক্রের মূল হোতা। দিল্লিতে তার একটি বাড়ি আছে। এ রাজ্যের কিশোরীদের প্রথমে রাখা হতো সেখানেই। পরে খদ্দের মিললে তাদের বিক্রি করে দেওয়া হতো। এ রাজ্যে কাশেমের বেশ কিছু এজেন্টের হদিস মিলেছে। তাদের খোঁজ চলছে।
Social Plugin