উচ্চরক্তচাপ কমতে সাহায্য করে যে খাবারগুলো



যখন স্বাভাবিক চাপের হারের চেয়ে বেশি উচ্চ মাত্রায় ধমনীর মধ্য দিয়ে রক্ত প্রবাহিত হয় তখন তাকে উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন হয়েছে বলা হয়। এর ফলে ধমনী ক্ষতিগ্রস্থ হয় এবং স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। এটি বেশিরভাগ পূর্ণ বয়স্ক মানুষের সাধারণ স্বাস্থ্যগত সমস্যা হলেও বছরের পর বছর তা অলক্ষেই থেকে যায়। এই অবস্থার উন্নতি করা সম্ভব ওজন নিয়ন্ত্রণে রেখে ও পুষ্টি সমৃদ্ধ খা বার খেয়ে, যাতে রক্তনালী গুলো উন্মুক্ত ও প্রসারিত থাকে এবং শরীর থেকে অতিরিক্ত সোডিয়াম বাহির হয়ে যায়। যদি আপনি প্রাকৃতিক উপায়ে হাইপারটেনশনকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান তাহলে কিছু স্বাস্থ্যকর, সুস্বাদু ও হার্টের জন্য উপকারি বেছে নিতে পারেন। আমরা জানি উচ্চমাত্রার সম্পৃক্তচর্বি ও কোলেস্টেরল সমৃদ্ধ খাবার বর্জন করে রক্তচাপ কমানো যায়। তাজা ফলমূল, শাকসবজি, কম চর্বিযুক্ত দুধ ও দুগ্ধ জাতীয় খাবার খেলে রক্তচাপ কমে। আজ তাহলে এমন কিছু খাবারের কথাই জেনে নেই আসুন যা আপনাকে হাইপারটেনশন মুক্ত রাখতে সাহায্য করবে।

১। কলা কলা শুধুমাত্র সুস্বাদুই নয় বরং স্ট্রোক ও হার্ট ডিজিজ হওয়ার ঝুঁকিও কমায়। কলাতে পটাসিয়াম থেকে সোডিয়াম পর্যন্ত সকল ধরণের খনিজ থাকে। একটি মাঝারি আকারের কলাতে ১% ক্যালসিয়াম, ৮% ম্যাগনেসিয়াম এবং ১২% পটাসিয়াম থাকে। মূত্রবর্ধক হিসেবে পটাসিয়াম খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। তাই দিনে একটি বা দুটি কলা খেলে রক্তের সুগার লেভেল পুনরুদ্ধারে সাহায্য করে।

২। সূর্যমুখীর বীজ ম্যাগনেসিয়ামের চমৎকার উৎস সূর্যমুখীর বীজ। এক কাপের এক চতুর্থাংশ পরিমাণ সূর্যমুখীর বীজ স্ন্যাক্স হিসেবে খেতে পারেন। তবে অবশ্যই লবণ ছাড়া যেনো হয়।

৩। ডার্ক চকলেট ২০০৭ সালের জুলাই মাসে “দ্যা জার্নাল অফ দ্যা আমেরিকান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন” (JAMA) তে প্রকাশিত প্রতিবেদনে পরামর্শ দেয়া হয় যে, প্রতিদিন সামান্য পরিমাণে ডার্ক চকলেট খেলে রক্তচাপ কমে। ডার্ক চকলেটে ফ্লেভোনলস নামক উপাদান থাকে যা কারডিওভাস্কুলার ডিজিজ এর ঝুঁকি কমায়।

৪। পালংশাক সবুজ শাক বিশেষ করে পালংশাকে ক্যালোরি কম থাকে, উচ্চমাত্রার ফাইবার থাকে এবং হৃদস্বাস্থ্যের জন্য পুষ্টিকর উপাদান যেমন- পটাসিয়াম, ফোলেট ও ম্যাগনেসিয়ামে পরিপূর্ণ থাকে। রক্তচাপের মাত্রা স্বাস্থ্যকর ভাবে নিয়ন্ত্রণের মূল উপাদানই এগুলো।

৫। টমেটো লাইকোপেন ও অন্য গুরুত্বপূর্ণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে টমেটোতে যা রক্তচাপ কমতে সাহায্য করে। পটাসিয়াম এর একটি ভালো উৎস টমেটো। পটাসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খেলে উচ্চরক্তচাপ কমতে ও হার্ট ডিজিজের ঝুঁকি কমায়।
৬। রসুন রসুন হাইপারটেনশনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার একটি ভালো উপাদান। কারণ রসুন রক্তকে পাতলা করে। যখন রসুনকে টুকরো টুকরো করা হয় তখন আলিসিন উৎপন্ন হয় যা একটি অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান। এটি হাইপারটেনশনের ফলে সৃষ্ট বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে সাহায্য করে যেমন- স্টোক, হার্ট ডিজিজ ইত্যাদি। রসুন কোলেস্টেরল কমতেও সাহায্য করে।

৭। পাস্তুরিত দুধ এটি শরীরের জন্য সত্যিই উপকারি। পাস্তুরিত দুধ ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম ও ভিটামিন ডি প্রদান করে। এই ৩টি উপাদান একত্রে একটি টিমের মত কাজ করে উচ্চ রক্তচাপের মাত্রা ৩-১০% পর্যন্ত কমাতে পারে।

৮। সিদ্ধ আলু ম্যাগনেসিয়াম ও পটাসিয়াম এ ভরপুর সিদ্ধ আলু যা হৃদস্বাস্থ্যের জন্য উপকারি। যখন পটাসিয়াম কমে যায় তখন শরীর অতিরিক্ত সোডিয়াম ধরে রাখে এবং সোডিয়াম বৃদ্ধি পেলে রক্তচাপ ও বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে যখন আমরা পটাসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খাই তখন শরীর অতিরিক্ত সোডিয়াম বাহির করে দেয়। ম্যাগনেসিয়াম ও পটাসিয়াম এর মত খনিজ উপাদানগুলো একসাথে রক্ত প্রবাহের উন্নতি ঘটায়।

উচ্চ রক্তচাপের উপর আরো অনেক কারণই প্রভাব বিস্তার করে যেমন- শারীরিক কার্যকারিতা, পর্যাপ্ত ঘুম, সান এক্সপোজার, মেডিটেশন এবং অন্যান্য স্ট্রেস ব্যবস্থাপনার কাজগুলো করা ইত্যাদি। তবে আপনি কি খাচ্ছেন তা অবশ্যই অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং এমন আরো অনেক খাবারই আছে যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে যেমন- সয়াবিন, মটরশুঁটি, জলপাই তেল, গ্রিনটি, হলুদ, কাঠবাদাম, বিট ও মাছের তেল, কিউই, পিচফল, টকদই, আস্ত শস্যদানা ইত্যাদি।